ডাইর উলফ আসলে কী?

যদি আপনি গেম অব থ্রোনস দেখেন, তাহলে নিশ্চয়ই ডাইর উলফদের কথা মনে আছে—সেই বিশাল, নির্ভীক, এবং একনিষ্ঠ প্রাণীগুলো যারা স্টার্ক ভাইবোনদের সঙ্গে ঘুরে বেড়াতো। তারা ছিল অনেক বড়, হিংস্র, এবং একটু ভয়ানকও বলতে হয়। কিন্তু ডাইর উলফ শুধু কাল্পনিক কোনো প্রাণী নয়। হাজার হাজার বছর আগে, তারা বাস্তবেই ছিল। উত্তর আমেরিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে ঘুরে বেড়াতো তারা, আর তাদের চোয়াল এতটাই শক্তিশালী ছিল যে হাড় ভেঙে ফেলতে পারত অনায়াসে।

প্রায় ১০,০০০ বছর আগে তারা বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু এখন অবাক করার মতো খবর হলো—বিজ্ঞানীরা আবার যেন ডাইর উলফদের ফিরিয়ে এনেছেন। পুরোপুরি না হলেও, কিছুটা তো বটেই। তারা সাধারণ ধূসর নেকড়ে (gray wolves)—যেমনটা আপনি ন্যাচার ডকুমেন্টারিতে দেখে থাকেন—তাদের জিনগতভাবে বদলে এমন এক রূপ দিয়েছেন যা দেখতে ও আচরণে অনেকটাই প্রাচীন ডাইর উলফের মতো। এটা কোনো জাদু নয়—এটা বিজ্ঞান। এবং এই কাজটা ঘটছে এখন, ২০২৫ সালে। জানতে চান কিভাবে সম্ভব হলো এটা? চলুন, ভেতরে ঢুকে দেখা যাক।

কেন বিজ্ঞানীরা এই কাজটা করছেন?

প্রশ্ন উঠতেই পারে—বিজ্ঞানীরা কেন নেকড়ের মতো প্রাণীর জিন নিয়ে এভাবে নাড়াচাড়া করছেন? এটা কি শুধু গেম অব থ্রোনস এর কোনো পোষা প্রাণী বাস্তবে তৈরি করার চেষ্টা? না, এর পেছনে রয়েছে আরও বড় কারণ।

এই প্রকল্পটি চালাচ্ছে Colossal Biosciences নামের একটি বিজ্ঞান গবেষণা প্রতিষ্ঠান। তাদের উদ্দেশ্য, বিজ্ঞানের সাহায্যে প্রকৃতিকে সহায়তা করা। ভাবুন তো, পৃথিবী প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে—গরমের সময় আরও গরম, শীতের সময় তীব্র ঠান্ডা, বন উজাড় হয়ে যাচ্ছে, আর এর সাথে সাথে বহু প্রাণীও টিকে থাকতে পারছে না। তাহলে যদি আমরা তাদের একটু সাহায্য করতে পারতাম? যদি নেকড়েদের এমনভাবে বদলে দিতাম যাতে তাদের লোম আরও ঘন হয়, বরফাচ্ছন্ন পরিবেশে টিকে থাকতে পারে, বা তাদের পা আরও শক্তিশালী হতো শিকার ধরতে পারার জন্য?

এই প্রকল্পে যে “ডাইর উলফ” ছানাগুলোর জন্ম হয়েছে, তারা আসলে এমন কিছু পরীক্ষার ফল—বিজ্ঞানীরা দেখতে চাইছেন, আদৌ সম্ভব কি না জিনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রাণীদের টিকে থাকার ক্ষমতা বাড়ানো।

কিন্তু বিষয়টা শুধু নেকড়েই সীমাবদ্ধ নয়। এটি অনেক বড় কিছুর প্রস্তুতি। বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, নেকড়ের ডিএনএ নিয়ে কাজ করতে করতে তারা একদিন বিলুপ্তপ্রায় বা বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের রক্ষা করার উপায় বের করতে পারবেন—বা হয়তো এমন প্রাণীকেও ফিরিয়ে আনতে পারবেন যাদের আমরা বহু আগেই হারিয়েছি, যেমন ম্যামথ বা ডোডো পাখি। যেন তারা প্রকৃতির নিয়মকানুন নতুনভাবে লিখতে চাইছেন—একেকটা ছোট পদক্ষেপ নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতে।

এই “ডাইর উলফ প্রকল্প” এক ধরনের পরীক্ষামূলক প্রচেষ্টা—একটা বাস্তব সাই-ফাই স্বপ্ন সফলভাবে বাস্তবে রূপ দিতে পারার সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে যাওয়া। অবিশ্বাস্য শোনাচ্ছে, তাই তো? এবার চলুন দেখা যাক, তারা আসলে কিভাবে এই নেকড়েদের সৃষ্টি করলেন।

তারা আসলে কী করেছিল?

চলুন এবার ঢুকে পড়ি এই “ডাইর উলফ” তৈরি হওয়ার খুঁটিনাটি গল্পে—চিন্তা করবেন না, সহজভাবেই বুঝিয়ে দিচ্ছি। পুরো ব্যাপারটা শুরু হয়েছে এক সাধারণ ধূসর নেকড়ে দিয়ে। কল্পনা করুন সেই নেকড়েদের, যাদের আপনি প্রাকৃতিক ডকুমেন্টারিতে দেখে থাকেন—বরফে ঢাকা জঙ্গলে হেঁটে বেড়ায়, কিংবা চাঁদের আলোয় হাউল করে। এটাই আমাদের মূল মডেল।

Colossal Biosciences-এর বিজ্ঞানীরা ভাবলেন, “আচ্ছা, এই ধূসর নেকড়েটাকে একটু বদলে ফেলি—এমনভাবে যাতে ও আরও বেশি প্রাচীন আত্মীয় ডাইর উলফের মতো হয়ে ওঠে।” ডাইর উলফরা ছিল আকারে অনেক বড়, শরীরে ভারী, আর তাদের গায়ের লোম ছিল সাদা, যা বরফে ঢাকা প্রাচীন পরিবেশে সহজেই লুকিয়ে থাকতে সাহায্য করত।

এই পরিবর্তন ঘটাতে গেলে বিজ্ঞানীদের ধূসর নেকড়ের ডিএনএর সঙ্গে খেলা করতে হতো। ডিএনএটা আসলে কী? সহজভাবে বললে, এটি হলো এক ধরনের নির্দেশিকা—একটি নেকড়ে কীভাবে বেড়ে উঠবে, তার লোমের রং কী হবে, আকার কতটা হবে—সবকিছুই সেখানে লেখা থাকে। কৌশলটা ছিল এই নির্দেশিকাটার নির্দিষ্ট অংশগুলো নতুন করে লিখে ফেলা।

এবার আসল মজার জায়গায় আসি। বিজ্ঞানীরা কিন্তু আন্দাজে কিছু করেননি—তাদের ছিল সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা। তারা ধূসর নেকড়ের ডিএনএর ২০টি নির্দিষ্ট জায়গা নির্বাচন করেন পরিবর্তন করার জন্য। এই ২০টি পরিবর্তন যেন সুইচ টিপে ডাইর উলফের বৈশিষ্ট্য চালু করার মতো—বড় শরীর, ঘন লোম, আর সম্ভবত আরও শক্তিশালী চোয়াল।

কিন্তু এমন ক্ষুদ্র আর জটিল কিছু জিন সম্পাদনা কীভাবে সম্ভব? এখানেই আসে এক অসাধারণ বৈজ্ঞানিক টুল, যার নাম CRISPR। এটা একধরনের জিনগত কাঁচি, বলতে পারেন—আর এটিই পুরো প্রক্রিয়ার গোপন রসদ। একটু পরেই ব্যাখ্যা করবো কীভাবে এটি কাজ করে। চলুন, এখন পর্যন্ত যা বুঝলাম তা একটু গুছিয়ে নেই।

আমাদের হাতে এখন আছে ধূসর নেকড়ের ডিএনএ, এবং বিজ্ঞানীরা সেটি একটু ‘ডাইর উলফ-সুলভ’ করে তুলতে চান। এটাই CRISPR-এর আসর জমানোর সময়। কল্পনা করুন, CRISPR হলো একজোড়া সুপার নিখুঁত কাঁচি, কিন্তু ডিএনএর জন্য। এটি বিজ্ঞানীদের সুযোগ দেয় নির্দেশিকা বইয়ের নির্দিষ্ট অংশে পৌঁছাতে, সেই অংশ কেটে বাদ দিতে, আর সেখানে নতুন কিছু লেখা যুক্ত করতে—যেন কোনো বইয়ের বাক্য সম্পাদনা করা হচ্ছে।

এই ক্ষেত্রে, তারা ধূসর নেকড়ের ডিএনএর ২০টি ছোট ছোট অংশ কেটে বাদ দিয়েছেন এবং সেখানে যোগ করেছেন এমন সংস্করণ যা তারা মনে করেন ডাইর উলফদের ছিল। অবশ্যই, তারা পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা কোনো ডাইর উলফকে দেখে কপি করেননি—ওরা তো বিলুপ্ত হয়েছে আজ থেকে প্রায় ১০,০০০ বছর আগে!

তাহলে তারা জানলো কী পরিবর্তন করতে হবে?

এখানেই ছিল গোয়েন্দাগিরির মতো বিজ্ঞান। গবেষকরা পুরনো ডাইর উলফের কঙ্কাল বিশ্লেষণ করেছেন—যেমন ক্যালিফোর্নিয়ার La Brea Tar Pits থেকে খনন করা হাড়। তারা fossil বা জীবাশ্মে রক্ষিত ডিএনএ’র ছেঁড়া-খোঁড়া অংশ বিশ্লেষণ করে আধুনিক নেকড়েদের সঙ্গে তুলনা করেছেন। পুরো নির্দেশিকা পাওয়া সম্ভব হয়নি—সময় সব নষ্ট করে দিয়েছে। তবুও, তারা যুক্তিসম্মত অনুমান করেছেন, ডাইর উলফের বৈশিষ্ট্য কী ছিল। বড় আকার? ঘন লোম? বিজ্ঞানীরা এই বৈশিষ্ট্যগুলো এমনভাবে ধূসর নেকড়ের ডিএনএতে লিখে দিয়েছেন, যেন নতুন কোনো রান্নার রেসিপি তৈরি করছেন। একটু “বড়” যোগ করুন, এক চিমটে “সাদা লোম”, তারপর ভালো করে নাড়ুন।

কিন্তু এখনো একটা কাজ বাকি ছিল—এই সম্পাদিত ডিএনএকে আসল নেকড়েতে রূপান্তর করা। সেটাই ছিল পরবর্তী ধাপ—চলুন দেখি, কীভাবে তারা সত্যিকার “ছানা”দের জন্ম দিলেন।

ঠিক আছে, এখন আমাদের হাতে সম্পাদিত ডিএনএ আছে—ধূসর নেকড়ের গঠনতন্ত্রে ২০টি ডাইর উলফ আপডেট, সবই CRISPR নামক বৈজ্ঞানিক কাঁচির কল্যাণে। এবার কী? আপনি তো আর আঙুলের স্ন্যাপ দিয়ে একটা নেকড়ে বানাতে পারবেন না। বিজ্ঞানীদের সেই ডিএনএকে জীবন্ত, নিঃশ্বাস ফেলা ছানায় রূপ দিতে হতো।

তারা যা করলেন তা হলো—এই সম্পাদিত ডিএনএ বসিয়ে দিলেন নেকড়ের ভ্রূণগুলোর মধ্যে। এই ভ্রূণগুলো একসময় বড় হয়ে পূর্ণ নেকড়ে হয়। কিন্তু চমকটা হলো: তারা এই ভ্রূণগুলো কোনো নেকড়ে মায়ের গর্ভে রাখেননি। বরং তারা ব্যবহার করেছেন সাধারণ গৃহপালিত কুকুরকে সারোগেট মা হিসেবে।

ভাবুন যেন নিজের ওভেন ছোট বলে, আপনি বন্ধুর ওভেনে কেক বেক করতে দিচ্ছেন! এই কুকুর-মায়েরা ভ্রূণ ধারণ করলেন, প্রসব করলেন, আর তখনই পৃথিবীতে এল সেই ছানাগুলো—আকারে বড়, গায়ে সাদা লোম, এবং দেখতে খানিকটা যেন ডাইর উলফের মতো।

ফলাফল?

তিনটি নেকড়ে ছানার জন্ম হয়েছে—নাম রাখা হয়েছে Romulus, Remus, এবং Khaleesi। জন্ম হয়েছে ২০২৪ সালের শেষ থেকে ২০২৫ সালের শুরুর মধ্যে। তাদের শরীর বড়, গায়ের লোম সাদা—এই সবই ওই ২০টি জিনগত পরিবর্তনের ফলাফল। ব্যাপারটা যেন এমন, আপনি সাধারণ চিনি দিয়ে বানানো বিস্কুটে একটু বাড়তি চিনি, আর একটু রঙিন স্প্রিংকেল ছিটিয়ে একে অনেক বেশি ফ্যান্সি করে তুলেছেন। তবুও, আসলে এটা একটা বিস্কুটই রয়ে গেছে।

তাই কেউ কেউ বলছেন, এগুলো আসলে “ডাইর উলফ” নয়, বরং ধূসর নেকড়ের একটা ‘মেকওভার ভার্সন’। তবুও ব্যাপারটা রোমাঞ্চকর, তাই না?

এরপর আসছে সেই বিতর্ক—এই প্রাণীগুলোকে আদৌ “ডাইর উলফ” বলা উচিত কি না?

এরা কি সত্যিই ডাইর উলফ?

তো, এখন আমাদের হাতে আছে এই অসাধারণ নতুন নেকড়ে ছানাগুলো—আকারে বড়, গায়ে সাদা লোম, আর স্বভাবে যেন একটু বেশি সাহসী। বিজ্ঞানীরা তাদের “ডাইর উলফ” নাম দিচ্ছেন, কিন্তু বড় প্রশ্নটা হলো: তারা কি সত্যিই ডাইর উলফ?

এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ বা না দিয়ে দেওয়া সহজ নয়—বিজ্ঞানী মহলে এই নামকরণ নিয়ে চলছে টানাপোড়েন। চলুন ধাপে ধাপে বুঝে নিই।

প্রথমত, এই ছানাগুলো তো হঠাৎ করে কোথা থেকে উদয় হয়নি। তারা শুরু করেছিল ধূসর নেকড়ে হিসেবেই—ঠিক যেমনটা আপনি কোনো ন্যাশনাল পার্কে দেখতে পারেন, বনপথে হেঁটে বেড়াচ্ছে এমন। এরপর বিজ্ঞানীরা তাদের ডিএনএর ২০টি ছোট ছোট অংশ বদলেছেন, যাতে তারা ডাইর উলফের বৈশিষ্ট্য—বড় গড়ন, সাদা লোম ইত্যাদি—ধারণ করে।

কিন্তু ব্যাপারটা এখানে এসে জটিল হয়: বিজ্ঞানীদের হাতে কোনো আসল ডাইর উলফের ডিএনএ ছিল না। কেন? কারণ ডাইর উলফ বিলুপ্ত হয়েছে আজ থেকে প্রায় ১০,০০০ বছর আগে, আর তাদের ডিএনএর বেশিরভাগই হারিয়ে গেছে—শুধু কিছু টুকরো-টাকরা হাড়ে লেগে থাকা নমুনা বাদে।

ভাবুন যেন আপনার কাছে একটি সাধারণ চিনি বিস্কুটের রেসিপি আছে। আপনি সেটাকে একটু “ফ্যান্সি” করতে চান, তাই একটু বাড়তি চিনি আর কিছু রঙিন স্প্রিংকেল যোগ করলেন। তখনও সেটি একটা চিনি বিস্কুটই থাকে—পুরোপুরি অন্য কোনো ডেজার্ট যেমন ব্রাউনি হয়ে যায় না।

ঠিক এভাবেই, এই নেকড়েগুলো আসলে ধূসর নেকড়ে—তাদের ভেতরে কিছু ডাইর উলফ-অনুপ্রাণিত ফিচার যোগ করা হয়েছে, কিন্তু মূল কাঠামো ১০০% আধুনিক নেকড়ের। তাহলে প্রশ্নটা দাঁড়ায়: আপনি কি এদের “ডাইর উলফ” বলতে পারেন, যখন এদের ভিত্তি তৈরি হয়েছে ধূসর নেকড়েকে দিয়ে?

এই জায়গাটাতেই বিতর্ক শুরু হয়—চলুন দেখি, উভয় পক্ষ কী বলছে।

এরা ডাইর উলফ”—পক্ষে যুক্তি

“হ্যাঁ, এরা ডাইর উলফ”—এই শিবিরে আছে Colossal Biosciences-এর বিজ্ঞানীরা, যারা এই প্রকল্পের নেপথ্যে কাজ করছেন। তারা নিজেদের কাজ নিয়ে খুবই উৎসাহী। তারা বলছেন, “দেখুন, আমাদের তৈরি করা ছানাগুলোর শরীর বড়, লোম সাদা, আর তাদের মধ্যে ডাইর উলফের মতো একটা ‘ভাব’ আছে—এই তো যথেষ্ট কাছাকাছি!”

তাদের মতে, আসল ডিএনএ না থাকলেও ডাইর উলফের গঠন আর বৈশিষ্ট্যগুলো ফিরিয়ে আনা গেছে—আর সেটাই আসল বিষয়। এটা তাদের কাছে বিজ্ঞানের বিশাল জয়—একটি পদক্ষেপ, যেটা ভবিষ্যতে বিলুপ্ত প্রাণী বা অন্তত তাদের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ফিরিয়ে আনার দিকে নিয়ে যেতে পারে। তারা মনে করেন, এই ছানাগুলোর নাম “ডাইর উলফ” হওয়া উচিত, কারণ গত ১০,০০০ বছরে এর চেয়ে কাছাকাছি কিছু আর আসেনি।

না, এরা শুধু ফ্যান্সি ধূসর নেকড়ে”—বিপক্ষে যুক্তি

অন্যদিকে আছে সংশয়বাদীরা—যারা বলছেন, “একটু থামুন, এত উত্তেজিত হবেন না।” তাদের যুক্তি সোজাসাপটা: আসল ডাইর উলফের ডিএনএ ছাড়া, আপনি এদের ডাইর উলফ বলতে পারেন না

তারা বলছেন, প্রাচীন ডাইর উলফদের নিজস্ব এক ধরনের ‘নির্দেশপত্র’ ছিল—তাদের ডিএনএ, যা আধুনিক নেকড়ের থেকে আলাদা ছিল। হ্যাঁ, এই ছানাগুলোর চেহারা হয়তো ডাইর উলফের মতো, কিন্তু ব্যাপারটা যেন একটা সাধারণ গাড়ির ওপর স্পয়লার আর চকচকে চাক্কা বসানো—ভেতরে গাড়িটা কিন্তু একইই থেকে গেছে।

তারা আরও বলেন, fossil থেকে অনুমান করে প্রাচীন ডিএনএর কী রূপ ছিল, সেই অনুযায়ী আধুনিক নেকড়েকে বদলে ফেলাই “ফিরিয়ে আনা” বলা যায় না। এটি একটি সাজানো সংস্করণ, পুনর্জন্ম নয়।

তাহলে কোন পক্ষের যুক্তি বেশি জোরালো?

একদিকে আছে “ডাইর উলফ” পক্ষ—তাদের চোখে এই বড়, সাদা ছানাগুলো প্রায়-ডাইর উলফ। আর অন্যদিকে “না-এরা-শুধুই-নেকড়ে” পক্ষ—যারা বলছেন, এই ছানারা শুধুই মেকওভারধারী ধূসর নেকড়ে।

এটা অনেকটা তর্কের মতো: আপনি কি কোনো কাভার সংলগ্ন গানকে আসল গানের সমান বলতে পারবেন? নির্ভর করে আপনি কোন দিকটা বেশি গুরুত্ব দেন।

সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, আমরা কখনোই ডাইর উলফের পূর্ণাঙ্গ ডিএনএ খুঁজে পাব না—পুরনো হাড় থেকে যতটুকু পাওয়া যায়, তা ভীষণ সীমিত। তাই Colossal Biosciences-এর বিজ্ঞানীরা তদন্ত করে fossil খুঁজেছেন, আধুনিক নেকড়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন, এবং সেরাটা আন্দাজ করে ২০টি পরিবর্তন করেছেন, যেন দেখতে ডাইর উলফের মতো লাগে।

কিন্তু “আন্দাজ করা” আর “জেনে করা”—এই দুইয়ের মধ্যে বিশাল পার্থক্য, আর সেটাই এই বিতর্ককে জ্বালিয়ে রেখেছে। এটা বিজ্ঞানের সঙ্গে এক চিমটে কল্পনার মিশ্রণ।

একটা মজার তুলনা দিয়ে ভাবুন: যদি আপনি আপনার গোল্ডেন রিট্রিভার কুকুরটাকে সিংহের পোশাক পরান, তাহলে সে হয়তো দেখতে ভয়ানক লাগবে, কিন্তু আসলে সে একটা কুকুরই থাকবে। ঠিক তেমনই, এই ছানাগুলো ডাইর উলফের বৈশিষ্ট্য নিয়ে সজ্জিত ধূসর নেকড়ে—অসাধারণ, নিঃসন্দেহে, কিন্তু আসল ১০,০০০ বছর আগের প্রাণী নয়।

তবুও, এমনকি যারা সন্দেহ পোষণ করেন, তারাও স্বীকার করেন যে এটা একটা বড় সাফল্য। CRISPR ব্যবহার করে ডিএনএর ২০টি জায়গায় নিখুঁত পরিবর্তন আনা যেন বিশাল এক বইয়ের মাঝখানে একটা টাইপো ঠিক করা—তাও বাকি লেখাগুলো নষ্ট না করেই! অবিশ্বাস্য, তাই না?

তাই আপনি একে “ডাইর উলফ” বলুন, বা “বাড়তি মডিফায়েড নেকড়ে”—তবুও একটা বড় প্রশ্ন সামনে চলে আসে: একটি বিলুপ্ত প্রাণীকে ফিরিয়ে আনা বলতে হলে ঠিক কী অর্জন করতে হবে?

আপনার কী মত? এতটুকু কাছাকাছি হলেই চলবে,” নাকি আসল জিনিস না পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করাই উচিত?

এরপর চলুন, এই বিশেষ ছানাগুলোর সঙ্গে পরিচিত হই—দেখি, ঠিক কী কী আছে তাদের মধ্যে যা এতটা আলাদা করে তোলে!

পরিচিত হোন এই ছানাগুলোর সঙ্গে

আসুন, বিতর্ক থেকে একটু বিরতি নিই এবং এই বিজ্ঞান কাহিনির আসল তারকাদের সঙ্গে পরিচিত হই—এই নেকড়ে ছানাগুলো! বলুন হ্যালো Romulus, Remus, এবং Khaleesi-কে—তিনটি ছোট্ট নেকড়ে, কিন্তু তাদের দাপট কম নয়। এরা জন্ম নিয়েছে ২০২৪ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৫ সালের শুরু পর্যন্ত সময়ে, আর এদের পৃথিবীতে আসা সম্ভব হয়েছে কিছু সাধারণ পোষা কুকুর মায়ের কারণে, যারা সারোগেট মায়ের ভূমিকা পালন করেছে।

ভাবুন তো—একটি সাধারণ গৃহপালিত কুকুর গর্ভে বহন করছে এমন ছানা, যাদের ডিএনএ সম্পাদিত হয়েছে! এটা যেন একেবারে অবিশ্বাস্য রকমের দলবদ্ধ সাফল্য। যখন ছানাগুলো জন্ম নিলো, বিজ্ঞানীরা সঙ্গে সঙ্গেই বুঝে গেলেন—এরা সাধারণ কোনো নেকড়ে ছানা নয়। এদের শরীর সাধারণ ধূসর নেকড়ের চেয়ে বড়, আর গায়ে ঘন সাদা লোম, যেন বরফঝড়ে ছুটে বেড়ানোর জন্য প্রস্তুত। মনে হচ্ছে যেন কোনো শীতকালীন সিনেমার চরিত্রের অডিশনে এসেছে!

Romulus এবং Remus—এই দুই নাম এসেছে রোম নগরীর পৌরাণিক দুই প্রতিষ্ঠাতার নাম থেকে—তাদের মধ্যে আছে একরকম প্রাচীন গৌরবের ছোঁয়া। আর Khaleesi? হ্যাঁ, আরও একবার Game of Thrones-এর প্রতি শ্রদ্ধা—তার মধ্যে যেন এক রকম ড্রাগন কুইনের শক্তি।

এই ছানাগুলো এখন ল্যাবেই বড় হচ্ছে, বিজ্ঞানীদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে, যারা খেয়াল রাখছেন সেই ২০টি ডিএনএ পরিবর্তনের প্রভাব ঠিক কেমনভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। তারা কি আরও বড় হবে? তাদের চোয়াল কি আগের ডাইর উলফদের মতো শক্তিশালী হবে? এটা এখনো বলা যাচ্ছে না, তবে তারা ইতিমধ্যেই অনেকের নজর কেড়েছে।

এই ছানারা প্রমাণ করে দিচ্ছে—বিজ্ঞান আজ এমন কিছু করতে পারছে, যা একসময় ছিল কেবল কল্পনার বিষয়। জানতে চান এদের ভবিষ্যৎ কী? চলুন একবার উঁকি দেই সামনে কী অপেক্ষা করছে!

এরপর কী?

Romulus, Remus, আর Khaleesi—এই তুলতুলে সাদা নেকড়ে ছানারা এখন ল্যাবের মধ্যে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে, আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। কিন্তু এরপর কী হবে? এই “ডাইর উলফ” প্রকল্পের গন্তব্যই বা কোথায়?

প্রথমত, এই ছানাগুলো এখনই কোনো বনে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে না। তারা থাকছে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে—যেমন এক ধরনের বৈজ্ঞানিক নার্সারি—যেখানে গবেষকরা সারাক্ষণ নজর রাখতে পারবেন। ধরুন, এটা যেন এক পরীক্ষামূলক ড্রাইভ—বিজ্ঞানীরা দেখতে চাইছেন, ওই ২০টি ডিএনএ পরিবর্তন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে কাজ করছে।

তারা কি সত্যিকারের ডাইর উলফের মতো বড় হবে? সাদা লোম কি সত্যিই শীতল আবহাওয়ায় টিকে থাকার জন্য উপযোগী হবে? সবকিছু ধাপে ধাপে পর্যবেক্ষণ করে শেখার বিষয়।

স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনাটা বেশ সোজাসাপ্টা: এই নেকড়েগুলোর প্রতিটি দিক বিশ্লেষণ করা হবে—তারা কতটা বড় হয়, তাদের চোয়ালের শক্তি কতটা, এমনকি তারা ধূসর নেকড়েদের তুলনায় কেমনভাবে হাঁটে বা দৌড়ায়। বিষয়টা কেবল বাহ্যিক চেহারা নিয়ে নয়; বিজ্ঞানীরা জানতে চান, ডাইর উলফের বৈশিষ্ট্যগুলো বাস্তব দুনিয়ায় আদৌ কার্যকর কি না।

ভাবুন যেন আপনি একটা গাড়ির ইঞ্জিনে নতুন কিছু যোগ করলেন—শুধু বসিয়েই ছেড়ে দিলেন না, বরং চালিয়ে দেখলেন, সেটা সত্যিই ভালো চলছে কি না। আপাতত ছানাগুলো ল্যাবে নিরাপদে আর আরামে আছে, কিন্তু এটা শুধুই শুরু। এরপর কী হবে? চলুন এবার বড় ক্যানভাসে চোখ রাখি!

বড় পরিকল্পনা কী?

আসুন এবার বড় করে ভাবি—এই নেকড়ে ছানাগুলো আর পুরো ডিএনএ সম্পাদনা প্রকল্পের ভবিষ্যৎটা আসলে কেমন? বিজ্ঞানীরা যখন বুঝে যাবেন Romulus, Remus, আর Khaleesi ঠিক কীভাবে বেড়ে উঠছে, তখন তাদের হাতে আছে কিছু একেবারে বিস্ময়কর পরিকল্পনা।

একটি সম্ভাবনা হলো—এই নেকড়েরা, কিংবা তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, একদিন হয়তো প্রকৃত বনে ছেড়ে দেওয়া হবে। ভাবুন তো—বরফে ঢাকা বনভূমিতে ছুটে চলা একঝাঁক সাদা বিশাল নেকড়ে, যেন আইস এজ যুগ থেকে উঠে এসেছে সরাসরি! এটা কাল-পরশুর ঘটনা নয়—এই ছানাগুলো এখনো ল্যাবের ছোট্ট শিশু। কিন্তু অনেক গবেষকের কাছে এটা একটা স্বপ্ন। তারা মনে করেন, ডাইর উলফ-সদৃশ বৈশিষ্ট্যধারী নেকড়েরা পরিবেশগত ভারসাম্যে বড় ভূমিকা রাখতে পারে, এমনকি হয়তো সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারে, যা বিলুপ্ত প্রাণীরা রেখে গেছে।

তবে ব্যাপারটা শুধু নেকড়ে পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয়। এই প্রকল্পটি আসলে অনেক বড় কিছুর প্রস্তুতিমূলক ধাপ। Colossal Biosciences-এর বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই বলছেন, তারা ম্যামথ ফিরিয়ে আনার চেষ্টায় আছেন—হ্যাঁ, সেই লোমশ হাতির আত্মীয় যারা বহু আগেই হারিয়ে গেছে। ঠিক একই রকম CRISPR প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা আধুনিক হাতির জিনে ম্যামথের বৈশিষ্ট্য যুক্ত করার চেষ্টা করছেন।

আর কেন সেখানেই থামতে হবে? ডোডো পাখি, স্যাবার-টুথড বিড়াল—বিজ্ঞানীরা ভাবছেন, যেন একটা বিশাল “কামব্যাক স্পেশাল” তালিকা তৈরি করছেন তারা! মনে হচ্ছে, বিজ্ঞান যেন প্রকৃতির গল্পের দ্বিতীয় খণ্ড লিখছে—একেকটা সম্পাদনা দিয়ে একেকটা অধ্যায়।

অবশ্য, এর অন্য দিকও আছে: অনেকেই আশঙ্কা করছেন—আমরা কি খুব বেশি হস্তক্ষেপ করছি প্রকৃতির স্বাভাবিক ধারায়?

আপনার কী মনে হয়? আমাদের কি সীমা ছাড়িয়ে নতুন নতুন সৃষ্টি করে যেতে থাকা উচিত? নাকি অতীতকে অতীতেই থাকতে দেওয়াই ভালো?

একদিকে এই নেকড়ে ছানাগুলো আমাদের এক নতুন দিগন্তের স্বপ্ন দেখাচ্ছে—তবে এটাও মনে রাখতে হবে, এই শুরু মাত্র।

এখন আপনার পালা!

আচ্ছা, আমরা তো অনেক কিছু শিখে ফেললাম—প্রাচীন নেকড়ে, ডিএনএ-র কাঁচি, তুলতুলে ছানা, আর কল্পনাকে ছুঁয়ে ফেলা বৈজ্ঞানিক স্বপ্ন। এবার আপনার পালা! আপনার কী মত এই পুরো ব্যাপার নিয়ে?

আমরা কি প্রকৃতির সঙ্গে এমন পরীক্ষানিরীক্ষা করতে থাকা উচিত? ধূসর নেকড়ের সঙ্গে ডাইর উলফের বৈশিষ্ট্য মিশিয়ে নতুন কিছু তৈরি করা কি উত্তেজনাপূর্ণ, না কি এটা যেন পাগল বিজ্ঞানীর মতো আচরণ?

হয়তো আপনি এই ধারণায় মুগ্ধ—হারানো প্রাণীদের ফিরিয়ে আনা, যেন বাস্তবের জুরাসিক পার্ক, তবুও লোমে মোড়া প্রাণী নিয়ে। অথবা হয়তো আপনার মনে হয়—বিলুপ্ত যা হয়েছে, তাকে সেখানেই রেখে দেওয়াই ভালো।

সঠিক বা ভুল উত্তর নেই—ব্যাপারটা পুরোপুরি নির্ভর করে আপনার কৌতূহলের ওপর।

আপনার ভাবনা নিচে শেয়ার করুনশোনার জন্য অপেক্ষা করছি!
আপনার প্রিয় ছানা কে—Romulus, Remus, না Khaleesi?
না কি আপনি ভাবছেন, আর কোন প্রাণী হতে পারে পরবর্তী CRISPR পরীক্ষার লক্ষ্য?

এই কাহিনি এখনো চলছে—এখনই আপনার সুযোগ অংশগ্রহণ করার, হয়তো আপনার ধারণাই আমাদের সামনে নতুন কোনো প্রশ্ন এনে দেবে।

আলোচনা জিইয়ে রাখিচলুন বিজ্ঞান আর কল্পনার এই অসাধারণ যাত্রায় একসঙ্গে হাঁটি!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *